জান্নাতবাসীরা দেখতে কেমন হবে?
জান্নাত নিয়ে আমাদের কৌতুহলের শেষ নেই। আমাদের মনে হাজারো প্রশ্ন ঘুরে বেড়ায়। জান্নাত দেখতে কেমন? আমি তখন দেখতে কেমন হবো? আরও কতপ্রশ্ন। আজ আমরা জানবো এরকম হাজারো প্রশ্নের একটি। তা হল জান্নাতিদের দেহ দেখতে কেমন হয়? চলুন কোরান হাদিস কী বলে দেখা যাক।
একজন মুমিন যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেখানে সে তার নিজের জন্য বিশাল রাজ্য ও রাজত্ব দেখতে পাবে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তুমি যখন সেখানে দেখবে, দেখবে ভোগ-বিলাসের উপকরণ এবং বিশাল রাজ্য।’ (সুরা : দাহর, আয়াত : ২০)
আর হাদিস থেকে জানা যায়, যাকে সর্বনিম্ন মর্যাদার বিবেচনায় জান্নাত দেওয়া হবে, সেটিও ১০ দুনিয়ার সমান হবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৬)
কাজেই এই বিশাল জান্নাতে একজন মুমিনের দৈহিক গঠন কেমন হবে, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে মৌলিক কথা হলো, জান্নাতে দুনিয়ার এই দৈহিক কাঠামো থাকবে না। জান্নাতের বিশাল রাজ্যে রাজত্ব করার জন্য জান্নাতি সাজে জান্নাতবাসীদের দেহ সাজানো হবে। সেখানে নতুন দেহ, নতুন বয়সে নতুনভাবে মুমিনরা নিজেদের আবিষ্কার করবে। জান্নাতবাসীদের দেহের দৈর্ঘ্য হবে ৬০ হাত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে তাঁর যথাযোগ্য গঠনে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর উচ্চতা ছিল ৬০ হাত। তিনি তাঁকে সৃষ্টি করে বলেন, তুমি যাও। উপবিষ্ট ফেরেশতাদের এই দলকে সালাম করো এবং তুমি মনোযোগসহ শুনবে তারা তোমার সালামের কী জবাব দেয়। কারণ এটাই হবে তোমার ও তোমার বংশধরের সম্ভাষণ (তাহিয়্যা)। তাই তিনি গিয়ে বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম।’ তাঁরা জবাবে বলেন, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ।’ তাঁরা বাড়িয়ে বলেন, ‘ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বাক্যটি। তারপর নবী (সা.) আরো বলেন, যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা আদম (আ.)-এর আকৃতিবিশিষ্ট হবে। তার পর থেকে এ পর্যন্ত মানুষের আকৃতি ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। (বুখারি, হাদিস : ৬২২৭)
এ হাদিস থেকে জানা যায়, মানুষ আদম (আ.)-এর আকৃতিতে অর্থাৎ ৬০ হাত দৈর্ঘ্যের দেহ নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর এই দেহ শক্তিমত্তার দিক থেকে দুনিয়ার দেহের চেয়েও ভিন্ন হবে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, জান্নাতে প্রত্যেক মুমিনকে এত এত পরিমাণ দৈহিক শক্তি প্রদান করা হবে। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! তারা এমন করতে সক্ষম হবে? তিনি বলেন, প্রত্যেককে এক শ জনের সমান শক্তিমত্তা প্রদান করা হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫৩৬)
আর হ্যাঁ, জান্নাতে বার্ধক্য থাকবে না। মানুষগুলো চিরতরুণ চিরসবুজ থাকবে। তাদের বয়স হবে ৩০ থেকে ৩৩ বছর। এবং তাদের দাড়ি থাকবে না। শরীরে কোনো পশম থাকবে না। মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশের সময় তাদের শরীরে লোম থাকবে না, দাড়ি-গোঁফও থাকবে না এবং চোখে সুরমা লাগানো থাকবে। তারা হবে ৩০ অথবা ৩৩ বছরের যুবক। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫৪৫)
জান্নাতবাসীদের দৈহিক সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য কেমন হবে—এমন প্রশ্নের জবাব এসেছে অন্য হাদিসে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে দল প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মতো উজ্জ্বল হবে। তারা সেখানে থুতু ফেলবে না, নাক ঝাড়বে না, মলমূত্র ত্যাগ করবে না। সেখানে তাদের পাত্র হবে স্বর্ণের; তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের, তাদের ধুনুচিতে থাকবে সুগন্ধি কাষ্ঠ। তাদের গায়ের ঘাম মিসকের মতো সুগন্ধময় হবে। তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দুজন স্ত্রী থাকবে, যাদের সৌন্দর্যের কারণে গোশত ভেদ করে পায়ের নলার হাড়ের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোনো মতভেদ থাকবে না; পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের সবার অন্তর এক অন্তরের মতো হবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করতে থাকবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩২৪৫)
প্রতিক্ষণ/এ/শিাআ